First Time Flight Rules : প্রথমবার বিমানে উঠছেন? এয়ারপোর্টের সব নিয়ম জেনে নিন!

First Time Flight Rules: প্রথমবার বিমানে ভ্রমণ করতে যাচ্ছেন? উত্তেজনা, একটু ভয়, আর নতুন অভিজ্ঞতার আনন্দ মিলিয়ে মনের মধ্যে একটা মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে, তাই না? চিন্তার কিছু নেই! এই আর্টিকেলে আমরা আপনাকে এয়ারপোর্টের প্রতিটি ধাপ, নিয়ম-কানুন এবং প্রয়োজনীয় টিপস এমনভাবে বুঝিয়ে দেব যেন আপনার প্রথম বিমানযাত্রা হয় মসৃণ, নিরাপদ এবং আনন্দময়। আমরা আপনার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গভীর রিসার্চ করে এই গাইড তৈরি করেছি, যাতে আপনার মনে কোনো প্রশ্ন না থাকে।
ভ্রমণের আগে কী কী করবেন?
আপনার বিমানযাত্রার প্রস্তুতি শুরু হয় ফ্লাইটের কয়েক দিন আগে থেকেই। এই সময়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সেরে ফেললে পরে ঝামেলা অনেক কমবে।
ওয়েব চেক-ইন করুন
বেশিরভাগ এয়ারলাইন্স এখন ওয়েব চেক-ইন বাধ্যতামূলক করেছে। ফ্লাইট ছাড়ার ৪৮ থেকে ২৪ ঘণ্টা আগে এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপে গিয়ে আপনার PNR নম্বর দিয়ে চেক-ইন করতে পারবেন। এর সুবিধা হলো:
- আপনি বোর্ডিং পাস পেয়ে যাবেন, যা মোবাইলে সেভ করে রাখতে পারেন।
- অনেক সময় পছন্দের সিট (যেমন জানালার পাশে বা করিডোর) বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবেন।
- এয়ারপোর্টে গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর ঝামেলা কমবে।
টিপস: ওয়েব চেক-ইন করার সময় বোর্ডিং পাসটি ডাউনলোড করে ফোনে সেভ করুন বা প্রিন্ট করে রাখুন। ইন্টারনেট না থাকলেও যেন পাসটি দেখাতে পারেন।
লাগেজ গোছানোর নিয়ম
লাগেজ নিয়ে বিভ্রান্তি অনেকের মধ্যেই থাকে। তাই আগে থেকে জেনে নিন কীভাবে গোছাবেন। লাগেজ দুই ধরনের:
- কেবিন ব্যাগ: এটা আপনি বিমানের ভেতরে সঙ্গে নিয়ে যাবেন। সাধারণত ৭-৮ কেজি ওজনের ছোট ব্যাগ বা ব্যাকপ্যাক অনুমোদিত। মাপ হবে প্রায় ৫৫ x ৩৫ x ২৫ সেমি (চাকা ও হ্যান্ডেলসহ)।
- চেক-ইন লাগেজ: এটা বিমানের কার্গোতে যাবে। সাধারণত ১৫-২০ কেজি পর্যন্ত ফ্রি থাকে (এয়ারলাইন্সের ওপর নির্ভর করে)। বেশি ওজন হলে অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে।
গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম:
- পাওয়ার ব্যাংক, ল্যাপটপ, মোবাইল, ইলেকট্রনিক গ্যাজেট শুধু কেবিন ব্যাগে রাখুন। চেক-ইন লাগেজে এগুলো নিষিদ্ধ।
- কাঁচি, ছুরি, ব্লেড, নেইল কাটার, তরল (১০০ মিলি বেশি), রাসায়নিক দ্রব্য বা দাহ্য পদার্থ কোনোভাবেই নেবেন না। এগুলো সিকিউরিটি চেকে আটকে যাবে।
- তরল পদার্থ (যেমন শ্যাম্পু, পারফিউম) কেবিন ব্যাগে নিতে চাইলে ১০০ মিলির ছোট কনটেইনারে রাখুন এবং স্বচ্ছ জিপলক ব্যাগে প্যাক করুন।
টিপস: লাগেজে নিজের নাম, ফোন নম্বর ও ঠিকানা লেখা একটি ট্যাগ লাগান। হারিয়ে গেলে খুঁজে পাওয়া সহজ হবে।
প্রয়োজনীয় নথি প্রস্তুত রাখুন
এয়ারপোর্টে প্রবেশ ও বোর্ডিংয়ের জন্য আপনার কাছে থাকতেই হবে:
- পাসপোর্ট
- ভোটার আইডি কার্ড
- আধার কার্ড (ফিজিক্যাল বা DigiLocker-এর ডিজিটাল কপি)
- প্যান কার্ড
- ড্রাইভিং লাইসেন্স
- সরকারি বা স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের ফটো আইডি (স্টুডেন্ট/সার্ভিস আইডি)
- জাতীয়করণকৃত ব্যাংকের পাসবুক (ছবিসহ)
- পেনশন কার্ড বা প্রতিবন্ধী আইডি কার্ড
মনে রাখবেন: পরিচয়পত্রের ছবি বা PDF গ্রহণযোগ্য নয়। আসল কার্ড বা DigiLocker-এর ডিজিটাল কপি দেখাতে হবে।
টিপস: DigiLocker অ্যাপে আধার বা অন্যান্য নথি সেভ করে রাখুন। ইন্টারনেট না থাকলেও এটি কাজে আসবে।
এয়ারপোর্টে পৌঁছানোর পর কী করবেন?
এয়ারপোর্টে সময়মতো পৌঁছানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘরোয়া ফ্লাইটের জন্য অন্তত ২-৩ ঘণ্টা আগে এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য ৩-৪ ঘণ্টা আগে পৌঁছান।
১. এয়ারপোর্টে প্রবেশ
এয়ারপোর্টের গেটে নিরাপত্তা কর্মীরা আপনার ই-টিকেট এবং পরিচয়পত্র চেক করবেন। তাই এই দুটি জিনিস হাতের কাছে রাখুন। এই ধাপে মোবাইলে ই-টিকেট দেখানো যায়, তবে পরিচয়পত্র অবশ্যই বৈধ হতে হবে।
২. বোর্ডিং পাস ও লাগেজ ড্রপ
- ভেতরে ঢুকে ডিসপ্লে বোর্ডে আপনার ফ্লাইটের নাম ও এয়ারলাইন্সের কাউন্টার নম্বর দেখে নিন।
- যদি ওয়েব চেক-ইন করে থাকেন, তবে শুধু চেক-ইন লাগেজ জমা দিতে কাউন্টারে যান। এখানে লাগেজের ওজন পরীক্ষা করা হবে, এবং আপনি একটি লাগেজ ট্যাগ বা টোকেন পাবেন।
- যদি ওয়েব চেক-ইন না করে থাকেন, তবে কাউন্টার থেকে বোর্ডিং পাস নিন।
টিপস: বোর্ডিং পাসে আপনার নাম, ফ্লাইট নম্বর, গেট নম্বর, সিট নম্বর এবং বোর্ডিংয়ের সময় ভালো করে চেক করুন।
৩. সিকিউরিটি চেক
সিকিউরিটি চেক হলো এয়ারপোর্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এখানে আপনার এবং আপনার কেবিন ব্যাগের তল্লাশি হবে। নিয়মগুলো জেনে নিন:
- একটি ট্রেতে মোবাইল, ওয়ালেট, ঘড়ি, বেল্ট, পাওয়ার ব্যাংক, ল্যাপটপ ইত্যাদি রাখুন। ল্যাপটপ বা ট্যাবলেট ব্যাগ থেকে বের করে আলাদা ট্রেতে রাখতে হবে।
- স্বচ্ছ জিপলক ব্যাগে তরল পদার্থ (১০০ মিলির কম) রাখুন।
- মেটাল ডিটেক্টরের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যান। জুতো বা জ্যাকেট খুলতে বলা হতে পারে।
- সিকিউরিটি চেক শেষ হলে ট্রে থেকে জিনিসপত্র সংগ্রহ করুন।
টিপস: সিকিউরিটি চেকে সময় বাঁচাতে আগে থেকে বেল্ট, ঘড়ি, মোবাইল ইত্যাদি ব্যাগে রেখে দিন।
৪. বোর্ডিং গেটে অপেক্ষা
- বোর্ডিং পাসে লেখা গেট নম্বর খুঁজে সেখানে যান। ডিসপ্লে বোর্ডে চোখ রাখুন, কারণ গেট নম্বর বা ফ্লাইটের সময় পরিবর্তন হতে পারে।
- বোর্ডিং শুরু হলে ঘোষণা হবে। লাইনে দাঁড়িয়ে বোর্ডিং পাস দেখিয়ে বিমানে উঠুন।
বিমানের ভেতরে কী করবেন?
বিমানে ওঠার পর সবকিছু সহজ হয়ে যায়, তবে কিছু নিয়ম মানতে হবে:
- সিট খুঁজে বসুন: বোর্ডিং পাসে লেখা সিট নম্বর দেখে আপনার জায়গায় বসুন। কেবিন ব্যাগ ওভারহেড কম্পার্টমেন্টে বা সিটের নিচে রাখুন।
- কেবিন ক্রুদের নির্দেশ শুনুন: ফ্লাইটের নিরাপত্তা নির্দেশনা (যেমন সিটবেল্ট বাঁধা, জরুরি প্রস্থানের তথ্য) মনোযোগ দিয়ে শুনুন।
- মোবাইল ফ্লাইট মোডে রাখুন: উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় মোবাইল ফ্লাইট মোডে রাখা বাধ্যতামূলক।
- অন্যদের সম্মান করুন: কেবিন ক্রু বা সহযাত্রীদের অসুবিধা হয় এমন কিছু করবেন না। কেবিন ক্রুদের ছবি বা ভিডিও তোলা থেকে বিরত থাকুন।
- ধূমপান নিষিদ্ধ: বিমানে ধূমপান করা আইনত নিষিদ্ধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
টিপস: সিটবেল্ট সবসময় বেঁধে রাখুন, বিশেষ করে টার্বুলেন্সের সময়। প্রয়োজনে কেবিন ক্রুদের সাহায্য চান।
গন্তব্যে পৌঁছে কী করবেন?
বিমান অবতরণের পর কয়েকটি ধাপ বাকি থাকে:
- লাগেজ সংগ্রহ: ডিসপ্লে বোর্ডে আপনার ফ্লাইট নম্বরের পাশে বেল্ট নম্বর দেখে ব্যাগেজ ক্লেম এরিয়ায় যান। আপনার লাগেজ শনাক্ত করে নিন।
- লাগেজ হারালে: যদি লাগেজ না পান, তবে তৎক্ষণাৎ এয়ারলাইন্সের হেল্প ডেস্কে যোগাযোগ করুন। লাগেজ ট্যাগ বা টোকেন দেখিয়ে অভিযোগ দায়ের করুন।
- এয়ারপোর্ট থেকে বের হওয়া: লাগেজ নিয়ে এয়ারপোর্ট különb>এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে যান। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে হলে ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস চেক হতে পারে।
প্রথমবার বিমানযাত্রার জন্য অতিরিক্ত টিপস
- সময়মতো পৌঁছান: দেরি হলে ফ্লাইট মিস করার ঝুঁকি থাকে। তাই আগেভাগে এয়ারপোর্টে পৌঁছে যান।
- পোশাক আরামদায়ক রাখুন: হালকা, আরামদায়ক পোশাক পরুন। জুতো সহজে খোলা-পরার মতো হলে সিকিউরিটি চেকে সময় বাঁচবে।
- খাবার ও পানি: এয়ারপোর্টে খাবারের দাম বেশি হতে পারে। সঙ্গে শুকনো খাবার (বিস্কুট, চকলেট) রাখুন। তবে তরল পানীয় নিষিদ্ধ।
- ফ্লাইটের তথ্য চেক করুন: এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইট বা অ্যাপে ফ্লাইটের স্ট্যাটাস চেক করুন। দেরি বা বাতিলের তথ্য আগে থেকে জানা যায়।
- শান্ত থাকুন: প্রথমবার হলে একটু নার্ভাস লাগতেই পারে। কিন্তু সবকিছু ধাপে ধাপে করলে কোনো সমস্যা হবে না।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
১. ওয়েব চেক-ইন না করলে কী হবে?
ওয়েব চেক-ইন না করলে এয়ারপোর্টের কাউন্টারে চেক-ইন করতে হবে, তবে লম্বা লাইনের ঝামেলা হতে পারে। কিছু এয়ারলাইন্স অতিরিক্ত ফি নিতে পারে।
২. কেবিন ব্যাগে কী কী নেওয়া যায়?
কেবিন ব্যাগে মোবাইল, ল্যাপটপ, পাওয়ার ব্যাংক, বই, ছোট পরিমাণ তরল (১০০ মিলির কম), ওষুধ ইত্যাদি নেওয়া যায়। ধারালো বা নিষিদ্ধ জিনিস নেবেন না।
৩. ফ্লাইট মিস করলে কী করব?
ফ্লাইট মিস করলে তৎক্ষণাৎ এয়ারলাইন্সের কাউন্টারে যোগাযোগ করুন। তারা পরবর্তী ফ্লাইট বা রিফান্ডের ব্যবস্থা করতে পারে।
৪. এয়ারপোর্টে কত আগে পৌঁছাব?
ঘরোয়া ফ্লাইটের জন্য ২-৩ ঘণ্টা এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য ৩-৪ ঘণ্টা আগে পৌঁছান।