SSC Case Update: সুপ্রিম কোর্টে এসএসসি মামলার শুনানি: পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগে বড় রায়ের অপেক্ষায় হাজারো চাকরিপ্রার্থী
SSC Case Update: পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন (WBSSC) সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি গতকাল, ২০ আগস্ট ২০২৫, ভারতের সুপ্রিম কোর্টে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘বিবেক পারিয়া বনাম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার’ (ডায়েরি নম্বর: ৪৬০৪৯/২০২৫) শীর্ষক এই মামলাটি বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং বিচারপতি সতীশ চন্দ্র শর্মার বেঞ্চে শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত ছিল। এই মামলার রায়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন রাজ্যের হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী, কারণ এটি তাদের ভবিষ্যৎ এবং রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার উপর গভীর প্রভাব ফেলবে।
মামলার মূল বিষয়বস্তু
এই মামলাটি মূলত ২০১৬ সালের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার কিছু সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা হয়েছে। মামলাকারীদের প্রধান অভিযোগগুলো নিম্নরূপ:
- যোগ্যতার মানদণ্ডে পরিবর্তন: ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চাকরিরত প্রার্থীদের জন্য ন্যূনতম যোগ্যতার নম্বর ৪৫% থেকে বাড়িয়ে ৫০% করা হয়েছিল। মামলাকারীদের দাবি, এই পরিবর্তন একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল এবং এর ফলে অনেক প্রার্থী সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
- শূন্যপদের সংখ্যা হ্রাস: অভিযোগ রয়েছে যে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সময় শূন্যপদের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যা প্রার্থীদের ক্ষতির কারণ হয়েছে। যদিও স্কুল সার্ভিস কমিশন এই বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে, মামলাকারীরা মনে করছেন এটি তাদের জন্য অন্যায়।
- নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা: মামলাকারীরা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব এবং নীতিগত সিদ্ধান্তের স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলেছেন।
কলকাতা হাইকোর্টের পূর্ববর্তী রায়
এর আগে কলকাতা হাইকোর্ট এই মামলায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ দিয়েছিল, যা এই মামলার ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। হাইকোর্টের মূল পর্যবেক্ষণগুলো ছিল:
- যোগ্যতার মানদণ্ডে পরিবর্তন একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং এটি স্বেচ্ছাচারী না হলে আদালত তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
- শূন্যপদ কমানোর অভিযোগের সমর্থনে মামলাকারীরা পর্যাপ্ত প্রমাণ দিতে পারেননি।
- জাতীয় শিক্ষক শিক্ষা পরিষদের (NCTE) নির্দেশিকা মেনেই যোগ্যতার মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছিল।
- শিক্ষক ঘাটতির কারণে হাইকোর্ট ২০১৬ সালের নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। তবে, এটি তাদের কোনো বিশেষ অধিকার দেয় না এবং নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের পুনরায় আবেদন করতে হবে।
শুনানির গুরুত্ব
গতকালের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টের রায় বহাল রাখবে, নাকি মামলাকারীদের আবেদন গ্রহণ করে যোগ্যতার মানদণ্ড ৪৫%-এ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে, তা নিয়ে তীব্র প্রত্যাশা রয়েছে। যদি সুপ্রিম কোর্ট মামলাকারীদের পক্ষে রায় দেয়, তাহলে হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীর জন্য নতুন করে চাকরির সুযোগ তৈরি হতে পারে। অন্যদিকে, হাইকোর্টের রায় বহাল থাকলে বর্তমান যোগ্যতার মানদণ্ড এবং নিয়োগ প্রক্রিয়াই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
এই মামলার রায় পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে। রাজ্যের স্কুলগুলোতে শিক্ষক ঘাটতি একটি গুরুতর সমস্যা, এবং এই রায় শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে, কারণ এই রায় তাদের ক্যারিয়ার এবং জীবিকার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
একজন চাকরিপ্রার্থী, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বলেন, “আমরা বছরের পর বছর ধরে এই নিয়োগের জন্য অপেক্ষা করছি। যোগ্যতার মানদণ্ড বাড়ানোর ফলে অনেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আমরা আশা করছি সুপ্রিম কোর্ট ন্যায্য রায় দেবে।”
পরবর্তী পদক্ষেপ
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের জন্য সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। যদি নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়, তবে পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনকে দ্রুত এবং স্বচ্ছভাবে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। এছাড়াও, শিক্ষক ঘাটতি মেটানোর জন্য রাজ্য সরকারকে অতিরিক্ত পদক্ষেপ নিতে হতে পারে।
এই মামলার পরবর্তী আপডেটের জন্য আমাদের সঙ্গে থাকুন। আমরা আপনাদের নিয়মিত সর্বশেষ তথ্য জানাব।